নিজস্ব প্রতিবেদক।।
একজন শিক্ষক যে একটি বিদ্যালয় পাল্টে দিতে অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে- সালেহা আক্তার হলেন এমনই এক উজ¦ল দৃষ্টান্ত। চাকরি জীবনে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার অনন্য এক প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিলেন আলোকিত মানুষ গড়ার এ কারিগর। সময়ের পরিক্রমায় নগরীর ঐতিহ্যবাহী মনোহরপুর আদর্শ স্কুলের সাথে তাঁর নাম জড়িয়ে রয়েছে টাকার এপিট -ওপিটের মতোই। তাঁর একান্ত-ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি আজ স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তাঁর অবদানে স্বীকৃতিস্বরুপ এই র্কীতিমান শিক্ষককে অবসরজনিত বিদায় উপলক্ষে দেওয়া হয়েছে রাজকীয় সংবর্ধনা। এ উপলক্ষে
শনিবার সকাল ১০ টায় তিনি অনেকটা বিষন্ন মনে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে টাউন হল মাঠের অনুষ্ঠানস্থলে আসেন । বেলা দেড়টায় বিদায় বেলায় চোখে ছিলো পানি, তবুও স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে সহকর্মী ও সকলের কাছ থেকে বিদায় নিলেন তিনি।
বিদায় সংবর্ধনায় অংশ নিয়েছেন অতিথি, সুধী-শিক্ষক, শিক্ষার্থী-অভিভাবক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী মিলে পাঁচ সহ¯্রাধিক মানুষ। শিক্ষক নেত্রীকে বিদায় জানাতে জেলার ১৭ উপজেলা থেকে আসেন শিক্ষক নেতারা। কুমিল্লায় একজন প্রাথমিক শিক্ষকের এমন বর্নাঢ্য বিদায় সংবর্ধনার ঘটনা বিরল।
বর্নিল আয়োজনে কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সালেহা আক্তারের বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। একই অনুষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরুষ্কার বিতরন করা হয়।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) কান্দিরপাড় টাউন হল মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক কাজী আবুল বাশারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কুমিল্লা সিটি মেয়র আরফানুল হক রিফাত, বিশিষ্ট নারী নেত্রী ও শিক্ষানুরাগী মিসেস মেহেরুন্নেছা বাহার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মান্নান, কুসিকের প্যানেল মেয়র হাবীবুর আল আমিন সাদী। অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রধান শিক্ষক সালেহা আক্তারকে শতাধিক ক্রেষ্ট ও ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেয়া হয়। পরে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বিদায় সংবর্ধনায় অশ্রুসিক্ত নয়নে সালেহা আক্তার বলেন, ‘ আমার কর্মজীবনে সেরা স য় পেয়েছি আজ আপনাদের ভালোবাসায়। তবে দীর্ঘ কর্মজীবনে কাজ আদায় করার জন্য হয়তো কারো বিরাগভাজন হয়েছি। অনেক সময় ইতিবাচক আবার কখনো নেতিবাচক ভাবে মানুষকে উপস্থাপন করা হয়। খোলা চোখ দিয়ে সবকিছু দেখা যায় না। চোখের আড়ালেও অনেক কিছু থাকে। তবে নিজের অজান্তেও যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি, কারো প্রতি অন্যায় করে থাকি তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ভালো থাকুক মনোহরপুর আদর্শ স্কুলের শিক্ষক- শিক্ষার্থী,অভিভাবক ও শুভাকাঙ্খিরা।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি বলেন, সালেহা আক্তার চাকুরী থেকে বিদায় নিয়েছে কিন্তু আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সুযোগ নেই। আমাদের সাথে থাকবে সালেহা। তাকে কুমিল্লার মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো হবে।
উল্লেখ্য, সালেহা আক্তার ১৯৮৩ সালের ৩রা নভেম্বর শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা করেন। পদোন্নতি পেয়ে তিনি ২০০৯ সালের ৯ মার্চ নগরীর মনোহরপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। দায়িত্ব নেওয়ার প্রাক্কালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১০৭ জন। তার অপ্রাণ প্রচেষ্টায় অল্প সময়ে ঘুরে দাঁড়ায় বিদ্যালয়টি। বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার।
জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় বিদ্যালয়টি নাম লিখিয়েছে বারবার। জিলা-ফয়জুন্নেছা ভর্তি পরীক্ষা ও প্রাথমিক বৃত্তিতে চমকপ্রদ সাফল্য অর্জন করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছর ভর্তির আবেদনকারী শিক্ষার্থী সংখ্যা হয় অন্তত: পাঁচ হাজার। বিদ্যালয়ের অভিভাবক-শিক্ষকরা এক বাক্যে বলেন- মনোহরপুর আদর্শ স্কুলের বর্তমানে এ তাক লাগানো সাফল্যের নেপথ্যে জড়িয়ে আছে সালেহা আক্তারের কর্মকৌশল- ক্যারিশমা।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page